ডিজিটাল মার্কেটিং এর কাজ কি? ডিজিটাল মার্কেটিং সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন।

 ডিজিটাল মার্কেটিং এর কাজ কি-  মনে করুন, আপনার একটি ভালো মানের ল্যাপটপ প্রয়োজন।এজন্য আপনি গুগলে সার্চ দিলেন “Best Quality Laptop”. আপনি গুগল সার্চ রেজাল্টে টপ টেন রেজাল্ট ক্লিক করে দেখতে লাগলেন। কিন্তু আপনি হয়তোে এই মুহুর্তে কিনবেন না। আপনি যদি পরবর্তীতে আর ল্যাপটপ গুগল সার্চ করে না দেখেন। তবুও দেখবেন যে, আপনার কাছে ল্যাপটপের বিজ্ঞাপন বেশি বেশি শো করছে। এতে অবশ্য আপনি ল্যাপটপের আপডেট নিউজ এবং অফার সম্পর্কে জানতে পারছেন। কিন্তু একটু চিন্তা করে দেখুন, আপনি গুগলে সার্চ করার আগে আপনার টাইমলাইনে এ ধরণের এড আসতো না। এরকম হওয়ার পিছনে কারণ একটাই- ডিজিটাল মার্কেটিং। ডিজিটাল মার্কেটাররা রিসার্চ করে আপনাকে টার্গেট করতে পেরেছে বিধায় আপনার টাইম লাইনে এ ধরণের এড শো করছে।

আজকের পোস্টে আমরা জানবো-

১। ডিজিটাল মার্কেটিং কি? 

২। ডিজিটাল মার্কেটিং এর ধরণ।

৩। ডিজিটাল মার্কেটিং কত প্রকার?

৪। ডিজিটাল মার্কেটিং এর কাজ কি?

৫। ডিজিটাল মার্কেটিং কিভাবে শুরু করবো?

ডিজিটাল মার্কেটিং এর কাজ কি?


ডিজিটাল মার্কেটিং কি?

ডিজিটাল মার্কেটিং হল কোন একটি প্রতিষ্ঠানের পণ্য বা সার্ভিস অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে  প্রচার ও প্রসারের একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে সেল জেনারেট করা হয়। আমরা সাধারণত সোশ্যাল মিডিয়ায় পণ্য বা কোন সেবার বিজ্ঞাপনকে ডিজিটাল মার্কেটিং হিসেবে মনে করি। বর্তমান যুগ ডিজিটাল মার্কেটিং এর যুগ। এখন একজন ছোট উদ্যোক্তা থেকে শুরু করে বড় বড় ব্যবসায়ীদেরকেও এখন  ডিজিটাল মার্কেটিং এর সহায়তা নিতে হয়। বর্তমানে ডিজিটাল মার্কেটাররা বিশেষ করে গুগল, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টুইটার, ইউটিউব এবং লিংকডইন সহ অনেক জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে কাজ করে থাকে। বর্তমানে অনলাইন ইনকাম অনেকটাই ডিজিটাল মার্কেটিং এর উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে একজন ডিজিটাল মার্কেটারের গড় বেতন মাসিক প্রায় ৬৭৯১ ডলার যা বাংলাদেশী টাকায় সাত লক্ষ টাকার উপরে। ডিজিটাল দুনিয়ায় ডিজিটাল মার্কেটিং এর ব্যাপ্তি বেড়েই চলেছে। বর্তমানে ডিজিটাল মার্কেটিং ছাড়া অনলাইন দুনিয়া এক রকম অচল বলা যায়।

ডিজিটাল মার্কেটিং এর ধরণ

আমরা আগেই জেনেছি, ডিজিটাল মার্কেটিং মূলত অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে  পন্য বা কোন সেবার  বিজ্ঞাপন প্রচার ও প্রসার করাকে বুঝায়। এখন সেটা হতে পারে ফেসবুক, টুইটার, ইন্সটাগ্রাম তথা সোশ্যাল মিডিয়া  মার্কেটিং এর মাধ্যমে, আবার গুগল অর্গানিক সার্চের মাধ্যমে হতে পারে। আবার হতে পারে কোন ট্রাফিক সোর্স ব্যবহার করে বা কোন ইমেইল মার্কেটিং এর মাধ্যমে।

আবার মোবাইলের এসএমএস এর মাধ্যমেও ডিজিটাল মার্কেটিং করা যায়। যেমন, বাংলাদেশে বিভিন্ন মোবাইল অপারেটর (গ্রামীণফোন, রবি, টেলিটক, বাংলালিংক,এয়ারটেল) কোম্পানী বিভিন্ন সময় মোবাইলে এসএমএস এর মাধ্যমে বিভিন্ন প্রমোশনাল অফার ব্যবহারকারীদের দিয়ে থাকে। এটাও এক ধরণের মার্কেটিং। এছাড়া টিভি, রেডিওর মাধ্যমে পণ্যর এড দেওয়াটাও এক ধরনের ডিজিটাল মার্কেটিং। সুতরাং ডিজিটাল জগতে নিজের ব্যবস্যায় টিকিয়ে রাখতে হলে ডিজিটাল মার্কেটিং এর কোন বিকল্প নেই।

ডিজিটাল মার্কেটিং এর কাজ কি?

ডিজিটাল মার্কেটিং এর কাজ হল ইন্টারনেট, মোবাইল ফোন, সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে কাংখিত ট্রাফিক বা ভিজিটরের কাছে প্রোডাক্ট বা সার্ভিস প্রচার করা এবং সেল জেনারেট করা। একটি কথা প্রচলিত আছে, প্রচারেই প্রসার। অর্থাৎ একটি ব্যবসা তখনই সফল হবে যখন এর প্রচারণা বা মার্কেটিং ঠিকঠাক হবেমার্কেটিং এর মাধ্যমে মানুষের নিকট পন্য সঠিক সময়ে পৌঁছে দেয়া হয়। বর্তমানে মানুষ অনলাইনে বেশিরভাগ সময় ব্যয় করে থাকে । একমাত্র ডিজিটাল মার্কেটিং এর মাধ্যমে নির্দিষ্ট গ্রাহক বা টার্গেটেড ট্রাফিকদের কাছে মার্কেটিং করা যায় যা প্রচলিত মার্কেটিং কখনোও সম্ভব নয় বিভিন্ন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে বিজ্ঞাপন, সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশন, সোশ্যাল মিডিয়া প্রচার, ইমেইল মার্কেটিং, ভিডিও মার্কেটিং এবং আরো কিছু স্টেপ রয়েছে যার মাধ্যমে টার্গেটেড ভিজিটরদের  নিকট মার্কেটিং করা এখন অনেকটাই সহজ হয়ে গিয়েছে। এর মূল লক্ষ্য হল অনলাইনে ভিজিটরদের আকর্ষণ করা, তাদের সাথে রিলেশন তৈরী করা এবং ফাইনালি সেল জেনারেট বৃদ্ধি করা। 

ডিজিটাল মার্কেটিং এর বিশেষ কিছু সুবিধা আছে যেমন:

  • লক্ষ্য নির্ধারণ: নির্দিষ্ট মার্কেটে পৌঁছানোর জন্য বিজ্ঞাপনগুলি টার্গেট করা যায়।

  • খরচ সাশ্রয়ী: প্রথাগত মার্কেটিংয়ের তুলনায় এটি অনেক কম খরচে করা যায়।

  • ডাটা ট্র্যাক করা: সিপিসি, ইমপ্রেশন, সেলসহ গুরুত্বপূর্ণ ডাটা ট্র্যাক করা যায়।

  • কাস্টমার সাথে রিলেশন: কাস্টমার বা গ্রাহকদের সাথে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করা এবং  তাদের ফিডব্যাক জানা যায়।

ডিজিটাল মার্কেটিং এর কাজ কি?



ডিজিটাল মার্কেটিং কত প্রকার

ডিজিটাল মার্কেটিং এর বেশ কয়েক প্রকারের হয়ে থাকে। ডিজিটাল মার্কেটাররা মূলত এগুলোর মাধ্যমে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে ডিজিটাল মার্কেটিং করে থাকেন। ডিজিটাল মার্কেটিং কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হলো:

  • ১.পেইড এডভার্টাইজিং: পেইড মেথড সিস্টেমে বিভিন্ন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে (যেমন Google Ads, Facebook Ads) বিজ্ঞাপন প্রচার করা হয়। এর মাধ্যমে দ্রুত ট্রাফিক পাওয়া যায় এবং দ্রুত সেল বৃদ্ধি করা সম্ভব হয়।

  • ২. এসইও বা সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (SEO): এসইও এর মাধ্যমে  ওয়েবসাইট বা নিশকে (প্রোডাক্ট) অপ্টিমাইজেশন করে সার্চ ইঞ্জিনে (যেমন Google, Bing) এর Rank এ আনা হয়। হয়। এর ফলে ওয়েবসাইটের ট্রাফিক বৃদ্ধি পায় এবং সেল বৃদ্ধির সম্ভাবনা তৈরি হয়।

  • ৩. সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং: বর্তমানে জনপ্রিয় এই পদ্ধতিতে বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম (যেমন Facebook, Instagram, Twitter) ব্যবহার করে মার্কেটিং করা হয়। এর মাধ্যমে ব্র্যান্ড ভ্যালু  বৃদ্ধি পায়। কাস্টমারদের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করা এবং বিক্রয় বৃদ্ধি করা সম্ভব হয়।

  • ৪. কন্টেন্ট মার্কেটিং: এই পদ্ধতিতে বিভিন্ন কনটেন্ট তৈরি করার মাধ্যমে মার্কেটিং করা হয়।মূল্যবান এবং আকর্ষণীয় কন্টেন্ট তৈরি করে তা বিভিন্ন ডিজিটাল মাধ্যমে (যেমন ওয়েবসাইট, ব্লগ, সোশ্যাল মিডিয়া) প্রচার করা হয়। এর মাধ্যমে গ্রাহকদের আকর্ষণ করা এবং তাদেরকে ব্র্যান্ডের প্রতি আগ্রহী করে তোলা সম্ভব।

  • ৫. ই-মেইল মার্কেটিং: এই মার্কেটিং পদ্ধতি ইমেইলে মাধ্যমে করা হয়। ইমেইল সাবস্ক্রিপশন এর মাধ্যমে খুব সহজেই টার্গেটেড ক্লায়েন্টদের কাছে পৌছানো যায়। এর মাধ্যমে ব্র্যান্ডের আপডেট, প্রোমোশনাল অফার, এবং অন্যান্য তথ্য গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব।

  • ৬. এফিলিয়েট মার্কেটিং: এই পদ্ধতিতে অন্য ওয়েবসাইট বা ব্যক্তিদের সাথে পার্টনারশীপ বা রেফারেল প্রোগ্রামের মাধ্যমে পণ্য বা সেবার প্রচার করা হয়। এর মাধ্যমে নতুন মার্কেটে প্রবেশ  অনেকটা সহজ হয়ে যায় এবং বিক্রয় বৃদ্ধি করা সম্ভব হয়।

  • উল্লেখ্য যে, ডিজিটাল মার্কেটিং এর আরও অনেক প্রকার রয়েছে, এবং প্রতিটি ব্যবসার জন্য উপযুক্ত ডিজিটাল মার্কেটিং পদ্ধতি নির্ভর করে ব্যবসার ধরন, লক্ষ্য, এবং বাজেট এর উপর।


  • ডিজিটাল মার্কেটিং সম্পর্কিত প্রশ্নোত্তর


    ডিজিটাল মার্কেটিং কিভাবে শিখবো?

    অনলাইনে অনেক বিনামূল্যের রিসোর্স আছে, বিশেষ করে, ব্লগ, ইউটিউব ভিডিও টিউটোরিয়াল, অনলাইন কোর্স করে শিখতে পারেন। এছাড়া সরাসরি ভাল কোন প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে পারেন।


    ডিজিটাল মার্কেটিং কোর্স করতে কত দিন সময় লাগে?

    সাধারণত, ডিজিটাল মার্কেটিং শিখতে ৩ থেকে ৬ মাস সময় লাগে। তবে, ডিজিটাল মার্কেটিং এর সকল বিষয় ভালভাবে শিখতে হলে ৬ মাস থেকে ১ বছর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। কিন্তু আপনার যদি আগে থেকেই বেসিক ধারণা থাকে, আর যদি সিরিয়াস হোন, তাহলে ১ থেকে ২ মাসের মধ্যেই শিখতে পারবেন এবং আর্নিং শুরু করতে পারবেন।


    ডিজিটাল মার্কেটিং করে কি পরিমাণ টাকা ইনকাম করা যায়?

    ডিজিটাল মার্কেটিং শিখে ১ থেকে ২ ক্যাটাগরিতে  ফ্রিল্যান্সিং শুরু করলে আপনি মাসে গড়ে ১০০০০ টাকা থেকে ১০০০০০ টাকা আয় করতে পারবেন। আর যদি স্বাধীনভাবে আমাজন, ক্লিকব্যাংক বা অন্যান্য প্ল্যাটফর্মে কাজ করেন তাহলে আপনার আয় আপনার দক্ষতার উপর নির্ভর করে। মাসে দশ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয় করতে পারবেন।


ডিজিটাল মার্কেটিং কিভাবে শুরু করবো?

পনি যদি ডিজিটাল মার্কেটিং শুরু করতে চান এবং এটিকে পেশা হিসেবে নিতে চান তাহলে আপনাকে অবশ্যই আন্তরিকতা দিয়ে কাজ শিখতে হবে। ডিজিটাল মার্কেটিং এ দক্ষ হতে পারলে আপনিও মাসে লক্ষ টাকার উপরে আয় করতে পারবেন। আপনার জন্য ডিজিটাল মার্কেটিং শেখার জন্য দুটি পদ্ধতি রয়েছে।


১। অনলাইনে অনেক বিনামূল্যের রিসোর্স আছে, যেমন ব্লগ, ভিডিও এবং কোর্স। বিশেষ করে ইউটিউবে বিভিন্ন ভিডিও টিউটোরিয়াল আছে, সেখান থেকে ভিডিও দেখে শিখতে পারেন। কিন্তুে এতে সময় একটু বেশি লাগবে।


২। বিভিন্ন প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের উপর কোর্স অফার করে, আপনি চাইলে সেখানেও ভর্তি হতে পারেন। আপনার জন্য শুভকামনা রইল।


New comments are not allowed.*

Previous Post Next Post